ভাষা ও সংস্কৃতি
মানুষের জন্ম যে সমাজেই হোক না কেন, সে সমাজের ভাষা ও সংস্কৃতি তাকে প্রভাবিত করে। সে প্রাথমিকভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সবচেয়ে কাছের মানুষ তথা মায়ের ভাষা শিখতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তার ওপর সমাজের প্রভাব পড়ে। মা কথাটি যেমন মধুর তেমনি মায়ের ভাষাটিও মধুর। অন্তরের অন্তস্তল থেকে অকৃত্রিম অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য মায়ের ভাষার বিকল্প নেই। এই মায়ের ভাষার মূল্য এত বেশি যে, কোনো কোনো জাতির পরিচয় সেই ভাষা অনুসারে আমরা লক্ষ করি। গ্রিক, রুশ, ইংরেজি, চীনা, থাই, মালয়, আরবি ইত্যাদি ভাষা অনুসারে তাদের জাতির পরিচয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, একইভাবে আমাদের পরিচয়ও বাঙালি এবং আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা। তবে একটি দেশের ভেতরে একাধিক আঞ্চলিক ও জাতিগোষ্ঠীর ভাষা থাকে। তারা যে পরিমণ্ডলেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, তাদেরও একটি মায়ের ভাষা থাকে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর ভাষা সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন করতে দেখা যায়। এটি তাদের মায়ের ভাষার প্রতি ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মায়ের ভাষার প্রতি ভালোবাসার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। এ দেশের মানুষের মায়ের ভাষার ওপর অকল্যাণকর খড়গ এসে পড়েছিল। এর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। পৃথিবীর হাজার হাজার ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত দু-একটা ভাষা টিকে থাকবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু যতই সতর্ক করা হোক, বিশ্ববাসী মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যাবে। এই ভাষার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও উচ্চতা যথার্থ উপলব্ধি করেছিলেন ষোড়শ শতকের কবি সৈয়দ সুলতান- ‘যারে সে ভাষে প্রভু করিলো সৃজন / সেই তার মাতৃভাষা, / অমূল্য সে ধন।’
মাতৃভাষার সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের পরিচিত সাহিত্যগুলোর অধিকাংশই তাদের নিজেদের ভাষায় রচিত। সুতরাং স্বদেশি সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা এবং জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য মাতৃভাষার বিকল্প নেই। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ।
বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাংলা মায়ের ভাষা এবং রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু থাকুক এবং বাঙালি জাতি তার সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে এগিয়ে যাক বিশ্বের দরবারে- এই প্রত্যাশা আমাদের।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস